ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি প্যাগানদের থেকে এসেছে? ইহুদী, খ্রিস্টানদের কালচার? ইসলামী শরীয়ত জন্মদিন পালন সম্পর্কে কি বলে ?


@ আরিফুল ইসলাম @ নামের এক সালাফী আহলে হাদিস মতাদর্শের ভাই তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছে,
ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইসলামে জন্মদিন পালন করা প্যাগানদের (পৌত্তলিক) সংস্কৃতি অনুকরণ-অনুসরণ করা।
তার লেখায় জন্মদিনের যে প্রথা উল্লেখ করেছে সেভাবে আমরা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করিনা। অন্য ধর্মের অনুসারে যেমন কেক কাটে, মোমবাতি জ্বালিয়ে, গানবাজনা করে, বেপর্দা-বেহায়া পানায় লিপ্ত হয়ে জন্মদিন পালন করা জায়েয নেই। শুধু জন্মদিন নয় যেকোন ক্ষেত্রেই হারাম ভাবে কোন কিছু করা ইসলামী শরীয়তে জায়েয নেই।
এভাবে কিছু মানুষ জন্মদিন পালন করে দেখে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্যাগানদের (পৌত্তলিক) সংস্কৃতি থেকে এসেছে বলে দাবী করাটা তার অজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং গোমরাহী মূলক। [ পোস্ট আর্কাইভ লিংক http://archive.is/p39hI ]
জন্মদিন পালনের সূচনা ইসলাম ধর্ম থেকেই। এটা সেও জানতে পারত যদি অন্য ধর্ম না খুঁজে, সম্মানিত ইসলাম ধর্মে খুঁজত বা একটু পড়াশুনা করত !! এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব তবে তার আগে কিছু বিষয়ে বলে নেই।
প্রতিটা ধর্মের সাথেই অন্য কোন ধর্মের মৌলিক কিছু বিষয়র মিল দেখা যায়। মূলত প্রত্যেক ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী ধর্মীয় বিষয়গুলো পালন করা হয়। যার কারণে মৌলিক বিষয়ে এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের সামঞ্জস্য পাওয়া গেলেও পালন করার নিয়ম ধর্ম অনুযায়ী ভিন্ন হয়। নিচে এমন কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।

উদাহরণ - ১

বিভিন্ন ধর্মে জন্মদিনের ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যায় অধিকাংশের মতে, শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রীষ্টপূর্বের ১৮ অথবা ২১ জুলাই। এ দিনটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। যা ফেরাউনের জন্মদিন পালনের অনেক আগে।
অন্যদিকে ভাদ্র ও মাঘ মাসের শুক্লা চতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন। হিন্দু বিশ্বাসীরা পূজা অর্চনার মাধ্যমেই তাদের দেবতাদের জন্মদিন পালন করতো। আবার অনেকের মতে জন্মদিন পালনের প্রথা শুরু হয়, যখন প্রাচীন মিশরে ফেরাউন সিংহাসন আহরণ করে। যা ছিলো প্রায় ৩,০০০ বছর পূর্বের ঘটনা।
তাছাড়াও, গ্রীকরা চন্দ্রের দেবী আরতেমিস (Artemis)-কে সম্মানস্বরূপ চন্দ্র আকৃতির কেক দিয়ে পূজা করতো। তারা কেকের উপর কয়েকটা মোমবাতিও দিতো, যা চাঁদের উজ্জ্বলতাকে বোঝাতে। গ্রীকরা মিশরীয়দের জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানটাকে তাদের দেব দেবীদের স্বার্থে সাদরে গ্রহণ করে।
জন্মদিন শুধু এক ধর্মে নয়, প্রায় সকল ধর্মেই পালন করা হয়েছে এখনও হচ্ছে। তবে প্রত্যেক ধর্মে জন্মদিন পালনের বিধান, নিয়ম ভিন্ন।

উদাহরণ - ২


ক) বাইবেলে অত্যন্ত কঠোরভাবে নারীদের মাথা ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে (1 Corinthians 11:5-6, 1 Corinthians 11:13)। তার প্রমাণ খ্রিস্টান নানদের মধ্যে আজও দেখা যায়। এমনকি মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকেও পোপের সামনে মাথা ঢাকতে দেখা গেছে। নিচের ছবিতে আপাদমস্তক ঢেকে রাখা কিছু খ্রিস্টান নারী দেখুন [সূত্র]। তাদের এই পোশাকের সাথে আপাদমস্তক ঢেকে রাখা মুসলিম নারীদের পোশাকের কোনো পার্থক্য নেই।

আপাদমস্তক ঢেকে রাখা খ্রিস্টান নারী

খ) এবার আপাদমস্তক ঢেকে রাখা কিছু ইহুদী নারীকে দেখুন [সূত্র]।
ইহুদী নারীদের বোরকা পরিহিত অবস্থায় ছবি।

স্বাভাবিক ভাবে মুসলমানরা উপরের নারীদেরকে চোখ বন্ধ করে 'দ্বীনি বোন' আখ্যা দেবে। অথচ তারা সব খ্রিস্টান ও ইহুদী নারী।
গ) একই ভাবে হিন্দুদের মূল ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদে নারীদেরকে ঘোমটা (Veil) পরার কথা বলা হয়েছে। দেখুন-
Cast down thine eyes and look not up. More closely set thy feet. Let none See what thy garment veils, for thou, a Brahman, hast become a dame. [Rig Veda 8:33:19]
এজন্য ভারত-বাংলাদেশের হিন্দু নারীদের একাংশ এখনো পর-পুরুষ দেখলে ঘোমটা দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে রাখে যাতে কেউ দেখতে না পায়। নিচের ছবিতে যে নারীদেরকে দেখা যাচ্ছে তারা ভারতীয় হিন্দু নারী [সূত্র]।


পর-পুরুষ দেখলে হিন্দু নারীদের মাথায় ঘোমটা দেয়ার ছবি

উদাহরণ - ৩

ইহুদীখ্রিস্ট ধর্মেও রোজা আছে। বিশেষভাবে ইহুদিদের জন্য সপ্তাহের শনিবার, মহররমের ১০ তারিখ রোজার বিধান আছে।
হিন্দুঃ-
হিন্দুধর্ম বা বৈদিক ধর্ম। বর্তমান হিন্দু ধর্মে প্রতিটি পূজায় ব্রতী পূজারি ও অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা নারী-পুরুষ উপবাস করে থাকে। এছাড়াও অমাবস্যা ও পূর্ণিমা ইত্যাদি তিথিতে উপবাস করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। হিন্দুরা একাদশী (চাঁদের ১১ তারিখ) উপবাস পালন করে থাকে। অনেকে বিশেষ দেবতার পূজা উপলক্ষে প্রতি শনিবার, শুক্রবার, বৃহস্পতিবার অথবা মঙ্গলবার উপবাস করে। তবে এর মধ্যে কেউ ‘নিরম্বু’ উপবাস করলে পানিও পান করা যায় না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে করা যায়।
বৌদ্ধঃ-
বৌদ্ধ ধর্মে উপবাস করা হয় মূলত রসনা নিয়ন্ত্রণ ও ভোগ থেকে নিজেকে বিরত রাখার কৌশল হিসেবে। বৌদ্ধ আত্মনিয়ন্ত্রণের কৌশলকে বলে ‘ধুতাঙ্গা’। অন্তত তিরিশটি পদ্ধতি আছে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণের। এর মধ্যে চারটি খাদ্যগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন: দিনে একবার ভক্ষণ (একাহারি), একবসাতে খাওয়া, কম খাওয়া (স্বল্পাহারি), মেঙ্গে খাওয়া, প্রথম সাত বাড়ি থেকে যা পাওয়া যায় তা-ই খাওয়া। এর যেকোনো একটি কেউ বেছে নিতে পারে।

ছাড়াও ইহুদী ধর্মের সাথে সম্মানিত ইসলাম ধর্মের আরো কিছু মিল রয়েছে


  1. মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ বার (ভোরে , দুপুরে , বিকেলে , সন্ধ্যায় ও রাতে) নামাজ আদায় করে। ইহুদিরা প্রতিদিন তিন বার (ভোরে, দুপুরে ও রাতে) প্রার্থনা করে।
  2. এই দুই ধর্মেই প্রার্থনার জন্য কিবলা (দিক) আছে। মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবা শরীফ ও ইহুদিদের কিবলা (দিক) জেরুজালেমের প্রার্থনা স্থান।
  3. মুসলমানদের জীবনে একবার হজ্জ্ব করতে হয় মক্কায়। ইহুদিদের বছরে তিনবার তীর্থ যাত্রা করতে হয় জেরুজালেমে।
  4. মুসলমান ও ইহুদি পুরুষদের খতনা (circumcision) করতে হয়।
  5. দাড়ি রাখতে বলা আছে দুই ধর্মেই। দাড়ি কাটা দুই ধর্মের দৃষ্টিতে গুনাহ / পাপ।
  6. মুসলমানরা নিজের সম্পদের একটি অংশ যাকাত হিসেবে দেয়। ইহুদিরা তাদের সম্পদের একটি অংশ প্রতি বছর চ্যারিটি হিসেবে দেয়।
  7. ইসলাম ধর্ম মতে, শুক্রবার সপ্তাহের পবিত্র দিন ও বিশেষ ইবাদতের দিন – জুম্মা। ইহুদি ধর্ম মতে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সপ্তাহের পবিত্র সময় ও বিশেষ প্রার্থনার সময়।
  8. পুরুষের টুপি পড়ার বিধান দুই ধর্মেই আছে।
  9. সন্তান জন্ম নিলে মুসলমানদের অনেকে বাচ্চার কানের কাছে আযান দেয়া হয়। ইহুদিরা অনেকে বাচ্চার কানের কাছে শিমা দেয়।
  10. দুই ধর্ম মতেই জেরুজালেম হচ্ছে পবিত্র নগরী। মুসলিমদের জন্য মক্কা হচ্ছে সবচেয়ে পবিত্র নগরী তারপর মদীনা তারপর জেরুজালেম। ইহুদিদের জন্য জেরুজালেম সবচেয়ে পবিত্র নগরী। আগে মুসলিমদের কিবলা জেরুজালেমে ছিলো। পরে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা নগরীর কাবা হয় মুসলিমদের কিবলা।
  11. ধর্মীয় দিনপঞ্জিকায় মাস নতুন চাঁদ দেখে ঠিক করা হয় দুই ধর্মেই।
এখন কি বলবেন? অন্য ধর্মের সাথে মৌলিক কিছু দিক মিলে আছে দেখেই কি ইসলামের উল্লেখিত বিষয়গুলো হারাম? ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসরণ হয়ে গেছে ??
মৌলিক কিছু বিষয়ে সামঞ্জস্য থাকলেই সেটাকে হারাম, অন্য ধর্মের অনুসরণ করা বলা যাবে না। বর্তমানে ৯৯% মানুষ যেভাবে বিয়ে করে তা ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সঠিক নয়। এখন বিয়ে মানেই বেপর্দা হওয়া, নাচ-গান, বেহায়াপনা-বেলাল্লাপনা সহ ভিন্ন ধর্মের অনুসরণ অনুকরণ করা হয়। এজন্য কেউ বলতে পারবে না যে ইসলাম ধর্মে বিয়ে বলতে কিছু নেই এটা প্যাগানদের (পৌত্তলিক) সংস্কৃতি বা ইহুদী, খ্রিস্টানদের কালচার।
না ! অন্য ধর্মের সাথে মৌলিক কিছু বিষয় সামঞ্জস্য থাকলেও পালনের দিক থেকে প্রতিটি ধর্মের নিয়ম ভিন্ন। আপনি মুসলিম রোযা রাখবেন, পর্দা করবেন, জন্মদিন পালন করবেন, বিয়ে করবেন, নামাজ পড়বেন ইত্যাদি সব কিছুই ইসলামী শরীয়তের নিয়মে হতে হবে। অন্য ধর্ম রোযা রাখে, পর্দা করে, দাড়ি রাখে, জন্মদিন পালন করে, বিয়ে করে, দান করে বিধায় কাফের মুশরিকদের অনুসরণ-অনুকরণ করা আখ্যা দিয়ে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করবেন না।
একই ভাবে জন্মদিনে কেক কাটা, গানবাজনা করা, বেপর্দা-বেহায়াপনা করা, আতশবাজি করা, মোমবাতি জ্বালানো সহ সকল হারাম কাজ করাই ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ এবং হারাম। সম্মানিত ইসলাম ধর্মের কোন কিছু পালন করলে তা ইসলামী শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকেই পালন করতে হবে। এর বাহিরে যেয়ে আপনি যত বড় ইবাদতই করুন না কেন তা কবুল হবে না বরং হারাম কাজের জন্য গুনাহগার হবেন।
------- ------- x ------- -------

ইসলাম থেকেই জন্মদিন পালনের সূচনা এবং ইসলামী শরীয়তে জন্মদিন পালন করার বিধান

উপরে বলেছিলাম ইসলাম ধর্ম থেকেই জন্মদিন পালনের সূচনা ঘটে। না এটা আমার কোন ব্যক্তিগত কথা নয়। পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফেই আছে।
সালাফী, আহলে হাদিসরা ইসলামের বিশেষ বিষয়গুলো কিভাবে বাদ দেয়া যায় সেই টার্গেট নিয়ে নেমেছে। নাহলে একজন মুসলমান জন্মদিন পালন করা যাবে কিনা জানার জন্য সর্বপ্রথম ইসলামী শরীয়তের মধ্যে খুঁজবে।

মূল প্রসঙ্গে আসি,
আমরা জানি মুসলমানদের জন্য অন্যতম দুই দিন হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এ দুই দিন ঈদের দিনও বটে। এ দুই ঈদ ছাড়াও আরো ঈদ আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা ঈদের দিন হলো পবিত্র জুমুয়ার দিন। এই দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা এর চেয়েও বেশী। জুমুয়ার দিনের এত মর্যাদা হওয়ার কারণ অনেকেরই জানা নেই। টিভি মৌলভিরাও মুখোশ উন্মোচনের ভয়ে কখনো এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না। নিচের হাদীছ শরীফ মনোযোগ দিয়ে দেখুন,
পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,
عَنِ ابْنِ السَّبَّاقِ , أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جُمُعَةٍ مِنَ الْجُمَعِ قَالَ : " يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ , إِنَّ هَذَا يَومٌ جَعَلَهُ اللَّهُ عِيدًا لِلْمُسْلِمِينَ

অর্থঃ- “হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক জুমুয়ার দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।

(ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)
এ হাদীস শরীফ থেকে আমরা জানতে পারলাম, জুমুয়ার দিনকে স্বয়ং আল্লাহ পাক ঈদের দিন হিসাবে ঘোষনা করেছেন।
কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে? দেখুন হাদীস শরীফে কি বলা হয়েছে-
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الـجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر

অর্থঃ- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭, মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩, মিশকাত শরীফ)
এই হাদীস শরীফ থেকে আমরা জানতে পারলাম, জুমুয়ার দিন অন্য দিন সমূহের সর্দার, এমনকি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা থেকেও বেশি সম্মানিত।
এবার দেখুন কেন জুমুয়ার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত??
ان من افضل ايامكم يوم الـجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض

অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ (দুনিয়া থেকে বিদায়) লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ – কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, উনার বিলাদত শরীফ (দুনিয়ায় আগমন), বিছাল শরীফ (দুইনিয়া থেকে বিদায়) এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ। এতটাই শ্রেষ্ঠ যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ্ !!!
এখানেই শেষ নয়, ‘জুমুয়ার দিন’ দিন শুধু ঈদের দিনই নয় বরং অন্যান্য দিনের চাইতেও শ্রেষ্ঠ দিন বা হাদীছ শরীফের ভাষায় ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ ।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي لُبَابَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ سَيّدُ الاَيَّامِ وَاَعْظَمُهَا عِنْدَ اللهِ وَهُوَ اَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ مِنْ يَّوْمِ الاَضْحٰى وَيَوْمِ الْفِطْرِ فِيْهِ خَـمْسُ خِلَالٍ خَلَقَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَهْبَطَ اللهُ فِيْهِ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِلَى الْأَرْضِ وَفِيْهِ تَوَفَّى اللهُ حَضْرْتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَفِيْهِ سَاعَةٌ لَا يَسْأَلُ اللهَ فِيْهَا الْعَبْدُ شَيْئًا اِلَّا اَعْطَاهُ مَا لَـمْ يَسْأَلْ حَرَامًا وَفِيْهِ تَقُوْمُ السَّاعَةُ مَا مِنْ مَلَكٍ مُّقَرَّبٍ وَلَا سَـمَاءٍ وَلَا اَرْضٍ وَلَا رِيَاحٍ وَلَا جِبَالٍ وَلَا بَـحْرٍ اِلَّا وَهُنَّ يُشْفِقْنَ مِنْ يَّوْمِ الْـجُمُعَةِ‏.

অর্থ : “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমআ শরীফের দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ (সাইয়্যিদুল আইয়াম) এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এদিনটি পবিত্র ঈদুল আদ্বহার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাকের নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।
এ দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পাঁচটি কারণ রয়েছে-

(১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন।
(২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন।
(৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ (দুনিয়া থেকে বিদায়) গ্রহন করেছেন।
(৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং
(৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুআর দিন সম্পর্কে ভীত নয়।”

(ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৩৭, আল্ মু’জামুল কবীর লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫১১, বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৯৭৩)

অর্থাৎ দেখা গেলো জুমুয়ার দিন শুধু ঈদের দিনই নয় বরং ‘সাইয়্যিদুল আইয়াম’ বা অন্যান সাধারন দিন সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। কারন সমূহের অন্যতম হচ্ছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, আগমন ও বিছাল (বিদায়)।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার জন্মদিন হচ্ছে শুক্রবার। এবং এটা সকল মুসলমান পালন করে থাকি। হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনিই সর্ব প্রথম নবী। মানুষ সৃষ্টির সূচনা উনার মাধ্যমেই হয়েছে। উনার জন্মদিনই কি সর্বপ্রথম জন্মদিন নয়??
হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার জন্মদিন পালন করার বিষয় স্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরেও কেন প্যাগান, ইহুদী, খ্রিস্টান সহ অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতি খোঁজ করতে যাব??
এটা কি নিজের বাবা থাকা সত্ত্বেও পাশের বাসার আংকেলকে বাবা ডাকার মত নয় ??
শুধু আদম আলাইহিস সালাম উনারই নয়, আরো অন্যান্য নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্মদিনের কথা ও জন্মদিনের পালনের কথা পবিত্র কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে।
@ আরিফুল ইসলাম @ তার স্ট্যাটাসের ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ পয়েন্ট পর্যন্ত একটা কমন বিষয় নিয়ে বলেছে। জন্মদিন শুভদিন মনে করা শয়তানের ধর্ম থেকে এসেছে। এটা সময়ের পূজা করা।
তার বক্তব্যটি পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের খিলাফ। কেননা নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিলাদত শরীফ (দুনিয়ায় আগমণ) ও বিছাল শরীফ (দুনিয়া থেকে বিদায়) সবই ঈদের ও শান্তির দিন।
১। হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
وسلم عليه يوم ولد ويوم يـموت ويوم يبعث حيا .

অর্থ: ‘উনার প্রতি সালাম (শান্তি), যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ (দুনিয়ায় আগমণ) লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ (দুনিয়া থেকে বিদায়) লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন।’(পবিত্র সূরা মারইয়াম, আয়াত শরীফ: ১৫)
২। হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে উনার নিজের বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
والسلم على يوم ولدت ومو اموت ويوم ابعث حيا .

অর্থঃ- ‘আমার প্রতি সালাম; যেদিন আমি বিলাদতী শরীফ (দুনিয়ায় আগমণ) প্রকাশ করি, যেদিন আমি বিছালী শরীফ (দুনিয়া থেকে বিদায়) প্রকাশ করবো এবং যেদিন পুনরুত্থিত হবো।’ (পবিত্র সূরা মারইয়াম : আয়াত শরীফ ৩৩)
৩। এবার দেখুন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি উনার দুনিয়ায় আগমণ এবং দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ সম্পর্কে কি বলেছেন?
হাদীস শরীফে বর্নিত আছে–
عن ابن مسود رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي عليه و سلم حياتي خير لكم و مماتي خير لكم
অর্থ : “আমার হায়াত-বিছাল (দুনিয়া থেকে বিদায়) সব অবস্থাই তোমাদের জন্য কল্যাণ বা উত্তম বা খায়ের বরকতের কারন !” সুবহানাল্লাহ্ !
দলীল-
√ কানযুল উম্মাল শরীফ
√ শিফা শরীফ ২য় খন্ড ১৯ পৃষ্ঠা!
আপনারা সব চেয়ে আশ্চর্য হবেন এই হাদীছ শরীফ দেখলে। যেখানে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই জন্মদিন পালন করেছেন সেখানে জন্মদিন পালন অন্য ধর্মে অনুসরণ করা বলাটা কতটা গোমরাহী মূলক কথা তা নিজেই চিন্তা করুন।
যারা সিহাহ সিত্তার অন্যতম কিতাব “মুসলিম শরীফের” হাদীস শরীফ মানে তারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধীতা করতে পারে না।
এই বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে একটা হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে,
عَنْ أَبِى قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم … وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ.

অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার উনার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জওয়াবে বলেছিলেন, ইহা এমন একখানা দিন যে দিনে আমি দুনিয়ায় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছি এবং এ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত প্রকাশ করা হয়েছে তথা এ দিনে আমার উপর পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল শুরু হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

(ছহীহ মুসলিম – পরিচ্ছেদ: ইস্তিহবাবু ছিয়ামি ছালাছাতি আইয়ামিন মিন্ কুল্লি শাহরিন ওয়া ছাওমি ইয়াওমি আরাফাতা ওয়া আশূরা ওয়াল ইছনাঈন ওয়াল খমীছ- হাদীস নম্বর ১১৬১)

সহীহ মুসলিম শরীফ কিতাবের স্ক্যান কপি
এছাড়া উক্ত হাদীস শরীফ ছহীহ ইবনি খুযাইমাহ কিতাবুছ ছিয়াম বাবু ইস্তিহ্বাবি ছওমি ইয়াওমিল্ ইছনাইন ইযিন্ নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুলিদা ইয়াওমুল্ ইছনাইনি ওয়া ফীহি ঊহিয়া ইলাইহি ওয়া ফীহি মাতা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধ্যায়ে-
عَنْ اَبِىْ قَتَادَةَ الاَنْصَارِىِّ رضى الله عنه قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَقْبَلَ عَلَيْهِ عُمَرُ عليه السلام فَقَالَ يَا نَبِىَّ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَوْمُ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ؟ قَالَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ اَمُوْتُ فِيهِ.

অর্থ: হযরত আবূ ক্বতাদাহ রদ্বিয়াল্লা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা একদা হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছুহবত মুবারকে ছিলাম, এমন সময় সেখানে হযরত উমর ফারূকক আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন এবং আরজ করলেন, হে মহান আল্লাাহ তায়ালার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সোমবার রোযা রাখা কেমন? জাওয়াবে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: আমি এ দিন মুবারকে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছি এবং এ দিন মুবারকে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করব। । সুবহানাল্লাাহ। (ছহীহ ইবনি খুযাইমাহ ৩/২৯৮ কিতাবুছ ছিয়াম : হাদীছ ২১১৭)
উক্ত হাদীস শরীফ থেকে যে বিষয়গুলো পরিষ্কার হলো-
১) হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের বিলাদত শরীফ (জন্মদিন / দুনিয়ায় আগমনের দিন) পালন বা ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করেছেন।
২) ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন উপলক্ষে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখেছেন।
৩) এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, প্রতি সপ্তাহে বিলাদত শরীফের যে বার অর্থাৎ সোমবার সেদিন নিদৃষ্ট করে নিয়ে পালন করেছেন।
৪)এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, প্রতি সপ্তাহে বিলাদত শরীফের যে বার অর্থাৎ সোমবার সেদিন নির্দিষ্ট করে নিয়ে পালন করেছেন।
৫) কেউ যদি ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করা বিদয়াত বলে তাহলে একটি খাছ সুন্নতকে বিদয়াত বলার কারনে কুফরী হবে।
৬) কেউ যদি বলে ঈদে মীলাদে হাবীবী খাইরুল কুরুনে ছিলো না,কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা হবে।
৭) কেউ যদি বলে ৬০০ হিজরীর পরে ঈদে মীলাদে হাবীবী চালু হয়েছে সেটা নবীজীর প্রতি স্পষ্ট অপবাদ দেয়া হবে।
এখানে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন আনলাম? কারণ @ আরিফুল ইসলাম @ তার পোস্টে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করাকে এবং সকল ঈদের সেরা ঈদ বলে থাকি তিনি এই সম্মানিত বিষয়টিকে শয়তানের পূজা, প্যাগান পৌত্তলিকদের থেকে নেয়া বলেছে। তার মূল উদ্দেশ্যই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতা করা।
চিন্তা করে দেখেছেন @ আরিফুল ইসলাম @ কি বলেছে ?? জন্মদিন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই পালন করেছেন। তাহলে যে নিজেকে মুসলমান দাবী করে এই জন্মদিন পালন করাকে শয়তানের ধর্মে থেকে এসেছে বলে সে কার উপরে অপবাদ দিল চিন্তা ভেবে দেখুন ?? নিজেকে মুসলমান দাবী করে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপরে এভাবে অপবাদ দিতে পারে?? একজন মুসলমানের কোন বিষয়ে মানার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট নয় যে, সেই কাজটি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন !!!
পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব চেয়ে বড় ঈদ তা প্রমাণ করতে আর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। জুমুয়ার দিনের মর্যাদা, গুরুত্বের হাদীছ শরীফ থেকেই বিষয়ট প্রমাণিত হয়ে গেছে।
কাজেই পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরোধিতা করার জন্য জন্মদিন পালন করা কাফের, মুশরিক, পৌত্তলিকদের অনুসরণ-অনুকরণ করা হয় প্রমাণ করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।
@ আরিফুল ইসলাম @ তার স্ট্যাটাসে বলেছে, জন্মদিনে কেক কাটা হয়, মোমবাতি জ্বালানো হয়, গিফট দেয়া এসব মুসলমানদের কালচার নয়। কেক কাটা, মোমবাতি জ্বালানোর সাথে এক মত। এটা ইসলামে জায়েয নেই। কিন্তু গিফট বা হাদিয়া দেয়া ইসলামে সুন্নত। যেমন এই সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم‏.‏

অর্থঃ- "উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ‘উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনারর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত।" (বুখারী শরীফ)

অপর এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏إِذَا أُتِيَ بِطَعَامٍ سَأَلَ عَنْهُ أَهَدِيَّةٌ أَمْ صَدَقَةٌ فَإِنْ قِيلَ صَدَقَةٌ‏.‏ قَالَ لأَصْحَابِهِ كُلُوا‏.‏ وَلَمْ يَأْكُلْ، وَإِنْ قِيلَ هَدِيَّةٌ‏.‏ ضَرَبَ بِيَدِهِ صلى الله عليه وسلم فَأَكَلَ مَعَهُمْ ‏
অর্থঃ আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সাদকা? যদি বলা হতো, সাদকা তা হলে সাহাবীদের তিনি বলতেন, আপনারা খান। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হত হাদিয়া। তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং উনাদের সাথে খাওয়ায় শরীক হতেন। (বুখারী শরীফ)

আমরা উপরের দলিল প্রমাণ থেকে দেখলাম সম্মানিত ইসলাম ধর্ম থেকেই জন্মদিন পালনের সূচনা হয়েছে। এবং সম্মানিত ইসলাম ধর্মে জন্মদিন বা দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের দিন উভয়টিই ঈদের (খুশি) ও শান্তির দিন।
এখানেও @ আরিফুল ইসলাম @ ভাইয়ের বক্তব্য সম্মানিত ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী ভুল প্রমাণিত হলো।
ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্যতম বিরোধিতাকারী হচ্ছে সৌদি আরব। আবার সালাফী, আহলে হাদিসরা সৌদি আরবের অন্ধভক্ত। ইসলাম নয় দেশের অন্ধভক্ত।
সেই সৌদি আরবের কিছু কেক কেটে জন্মদিন পালনের ছবি দেখুন,
সউদি আরবের ৮৩ তম জাতীয়দিবসে সউদি রাজার চিত্র অংকলিত বিশাল কেক

এরাই ফতওয়া দেয় নবিজির জন্মদিন পালন করা বিদয়াত, হারাম। আর নিজেদের ক্ষেত্রে জাতীয় দিবস পালন কি জায়েয ? [ছবি সূত্র]
এই ছবিতে কাদের কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে তা আর ব্যাখ্যা করার দরকার আছে? তাদের সবাই চিনে।
না জেনে নিজের ধারণা মত কোন হারামকে হালাল বা হালালকে হারাম বলা কুফরী।
আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
استحلال المعصية كفر.
অর্থ :গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী। (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী)
সুতরাং বিদআতী রোগীর মত সারাদিন বিদআত বিদআত করে সুন্নতকে বিদআত বলে কুফরী করে জাহান্নামী হচ্ছেন কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখুন।
নিজের বাবা থাকা সত্ত্বেও পাশের বাসার আংকেলকে বাবা ডাকার মত করে ইসলামী শরীয়তে থাকা পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, জন্মদিন পালন করাকে প্যাগানদের (পৌত্তলিক) বা ইহুদী, খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি বলার অপচেষ্টা করবেন না।

~~ সমাপ্ত ~~

Comments

নতুন পোস্ট সমূহ

বিদআতের পরিচয়, বিদআত কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফের ৫৭-৫৮ নম্বর আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা

তাবলীগের অর্থ ও তাবলীগের প্রকার।

আরবীতে ‘কুল্লু/কুল্লুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক।কিন্তু সবসময় এ শব্দটি দ্বারা ‘প্রত্যেক/সকল’ অর্থ বুঝায় না।

তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ?

কিশোরী আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বিয়ে নিয়ে বিদ্বেষীদের মিথ্যাচার!!

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদুন্নবী

যারা বলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের দিন খুশী প্রকাশ করা যাবে না, তাদের বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

~~~~~~~~~~~ শরীয়তে ঈদ কয়টি ? ~~~~~~~~~~~