আরবীতে ‘কুল্লু/কুল্লুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক।কিন্তু সবসময় এ শব্দটি দ্বারা ‘প্রত্যেক/সকল’ অর্থ বুঝায় না।





আরবীতে ‘কুল্লু/কুল্লুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক।কিন্তু সবসময় এ শব্দটি দ্বারা ‘প্রত্যেক/সকল’ অর্থ বুঝায় না।
কীভাবে?
নীচের হাদীস দুটি লক্ষ্য করুন।
একঃ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘কুল্লু বিদ’আতিন দ্বালালাতুন’
এখানে কুল্লু শব্দ এসেছে। আর দুস্টু লা-মাযহাবী বেদ’আতীরা এ শব্দটির সরাসরি অর্থ গ্রহণ করে থাকে। তারা বলে থাকে,এখানে কুল্লু শাব্দের অর্থ প্রত্যেক, আর তখন হাদীসের অর্থ হবে, প্রত্যেক বেদ’আতই ভ্রান্ত।
কিন্তু এই শব্দের অর্থ যদি সবসময় আমভাবে প্রত্যেক নেয়া হয়, তবে ঈমান হারানোর প্রচন্ড সম্ভাবনা রয়েছে।
কীভাবে?
হাদীসটি দেখুন,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
কুল্লু আইনিন যানিয়াতুন। অর্থাৎ প্রত্যেক চোখ যিনা তথা ব্যভিচার করে।
এখন-
চোখ তো আম্বিয়ায়ে কেরামের ও রয়েছে!
তাহলে হাদীসে বর্ণিত ‘কুল্লু’ শব্দের অর্থ যদি আমভাবে প্রত্যেক বা সকল ধরা হয়, তখন অর্থ দাঁড়াবে, সকল চোখ যিনা করে এমনকি নবীদের চোখ ও যিনা করে থাকে।
নাউযুবিল্লাহ।
এজন্যই বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, ‘কুল্লু’ শব্দটি আমভাবে সকল জিনিষকে অন্তর্ভুক্ত করেনা।
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিযুল হাদীস, হাদীস জগতে যাকে আমীরুল মু’মিনীন বলে ডাকা হয়, যিনি সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’ লিখেছেন ১২ খন্ডে- সেই ইবনু হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ ‘কুল্লু বিদ’আতিন দালালাহ’ এই হাদীসের আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, সকল বিদ’আত হারাম ও ভ্রান্ত নয়। হাদীসে বর্ণিত ‘কুল্লু’ শব্দটি দ্বারা আমভাবে ‘প্রত্যেক বা সকল’ অর্থ নেয়া যাবেনা।

ঠিক তেমনি সহীহ মুসলিম এর ব্যাখ্যাকার বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ ‘কুল্লু বিদ’আতিন দালালাহ’ হাদীসের আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, এখানে ‘কুল্লু’ দ্বারা আমভাবে সকল বিদ’আতকে বুঝাবেনা। সুতরাং সকল বিদ’আত হারাম নয়।
এ নিয়ে আরো অনেক বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ একই কথা বলেছেন। লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবার ভয়ে আপাতত উল্লেখ করছিনা। অর্থাৎ তারা সকলেই ফতোয়া দিয়েছেন, সকল বিদ’আত হারাম নয়।
কিন্তু ঘাড় ত্যাড়া লা মাযহাবীরা এসকল বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসগণের কথাকে মানছেনা। পাত্তা দিচ্ছেনা। পরোয়া করছেনা। তার পরিবর্তে ওরা সউদী আরবে গজিয়ে উঠা কতিপয় তথাকথিত নামধারী আলেম যারা কিনা উপরে বর্ণিত মুহাদ্দিসগণের কিতাব পড়ে আলেম হয়েছে--- তাদেরই মনগড়া ব্যাখ্যা তারা(লা-মাযহাবীরা) অনুসরণ করছে।
আর ফিতনাটা মূলত এভাবে ই উৎপত্তি হয়েছে।
অথচ হাদীসের জ্ঞানের দিক থেকে এসকল সউদী আলেমরা ইবনু হাজার আসকালানী, ইমাম নববীর মত বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস গণের পায়ের ধুলার কাছে ও যেতে পারবেনা।
কীভাবে?
কারণ ওরা ছিলেন হাদীসের হাফিয। আর হাদীসের হাফিয হতে হলে কমপক্ষে এক লক্ষ হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম সহ মুখস্ত থাকতে হয়। পক্ষান্তরে ঐ সকল সউদী আলেমরা বিন বায, বিন উসাইমিন, তাছাড়া আরেকজন হলেন আলবানী--- এদের ভিতরে এটোম বোম্ব মারলেও বর্ণনাকারীদের নাম সহ একশত হাদীস ও বলতে পারবেনা। পারে নাই। কোন রেকর্ড নেই।
দশটাই বলতে পেরেছিল কি না- কে জানে!!
শেষ কথাঃ
সকল বেদ’আত হারাম নয়। এটা জগত বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণের ফতোয়া। কুল্লু বিদ’আতিন দালালাহ – এই হাদীসে ‘কুল্লু’ দ্বারা আমভাবে সকল/প্রত্যেক অর্থ নেয়া যাবে না। এভাবে যদি আমভাবে অর্থ নেয়া হয়, তবে ইমান হারাবার ভয় রয়েছে, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং সাবধান।
নতুন কথায় লাফ মেরে উঠবেন না। বিপদে পড়বেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঈমান নিয়ে বাঁচার তাওফিক দিন। আমিন।

Comments

  1. ভাই তাহলে অর্থটা কি হবে

    ReplyDelete
    Replies
    1. Assalamualaikum
      দাদা আপনি ask করেছেন যে তাহলে তার মানে কি হবে মানে হাদীসটির
      তো প্রথমে বলি কুল্লু শব্দ যে আছে হাদীসে তার মানে সব বা প্রত্যেক হয়না কোনো সময় কুল্লুন শব্দের কিছু হয়ে থাকে যেমন সেই হাদীসটি তে হয়েছে
      আর দাদা হাদীসটির মানে হবে কিছু বিদআত যা পথভ্রষ্ট

      Delete

Post a Comment

নতুন পোস্ট সমূহ

বিদআতের পরিচয়, বিদআত কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফের ৫৭-৫৮ নম্বর আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা

তাবলীগের অর্থ ও তাবলীগের প্রকার।

তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ?

কিশোরী আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বিয়ে নিয়ে বিদ্বেষীদের মিথ্যাচার!!

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদুন্নবী

যারা বলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের দিন খুশী প্রকাশ করা যাবে না, তাদের বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

~~~~~~~~~~~ শরীয়তে ঈদ কয়টি ? ~~~~~~~~~~~

ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি প্যাগানদের থেকে এসেছে? ইহুদী, খ্রিস্টানদের কালচার? ইসলামী শরীয়ত জন্মদিন পালন সম্পর্কে কি বলে ?