হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রমাদ্বান মাসে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাদ্বানের এবং রমাদ্বানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। (সহীহ বুখারী ১/১৫৪)
এই হাদীস শরীফ খানা মূলত তাহাজ্জুদ নামাজের দলীল। কারন হাদীছ শরীফে বলা হচ্ছে রমাদ্বান ও রমাদ্বানের বাইরে ৩ রাকাত বিতির সহ ১১ রাকাত পড়তেন। রমাদ্বান মাস ব্যতীত অন্য মাসে তারাবী পড়া নেহায়েত হাস্যকর কথা। এখন যেহেতু সালাফীদের কাছে আর কোন দলীল নেই তাই তারা তাহাজ্জুকে তারাবী বলে চালাচ্ছে।
এবার দেখুন অন্য একটি সহীহ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ ، وَمُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ ، قَالاَ : حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ صَالِحٍ ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي قَيْسٍ ، قَالَ : قُلْتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : بِكَمْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُوتِرُ ؟ قَالَتْ : كَانَ يُوتِرُ بِأَرْبَعٍ وَثَلاَثٍ ، وَسِتٍّ وَثَلاَثٍ ، وَثَمَانٍ وَثَلاَثٍ ، وَعَشْرٍ وَثَلاَثٍ ، وَلَمْ يَكُنْ يُوتِرُ بِأَنْقَصَ مِنْ سَبْعٍ ، وَلاَ بِأَكْثَرَ مِنْ ثَلاَثَ عَشْرَةَ
অর্থ: হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে কে জিজ্ঞাসা করা হলোে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস ১৩৬২و তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯, সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪৫৮২, ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৩/২১)
تحقيق الألباني : صحيح
সালাফী গুরু নাছিরউদ্দীন আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছে। (সহীহ ওয়া দ্বয়ীফ সুনানে আবু দাউদ ৩/৩৬২)
অর্থাৎ এই সহীহ হাদীছ থেকে আমরা দেখছি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৩ রাকাত বিতির ছাড়া ৪ রাকাত, ৬ রাকাত, ৮ রাকাত, ১০ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন।
এ কারনে ৮ রাকাত সংশ্লিষ্ট বুখারী শরীফের হাদীছের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফের অন্যতম ব্যাখাকার , হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী রহতুল্লাহি আলাইহি বলেন,এই হাদিসে ইযতিরাব তথা অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহতুল্লাহি আলাইহি বলেন-আমি হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম এর এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। (ফাতহুল বারী শরুহুল বুখারী ৩/১৭)
সূতরাং দেখা যাচ্ছে ৮ রাকাত ছাড়াও আরো অনেকগুলো বর্ণনা আছে যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন রাকাত নির্দেশ করে, যার মূল বর্ণনাকারীও স্বয়ং হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম। উনার থেকে ১০ রাকাতের বর্ণনাও আমরা পেয়েছি। তাই ৮ রাকাত নামাজ অন্য গুলোর বিপরীত। এধরনের ইযতিরাবের জন্য ৮ রাকাতের একক দলীল গ্রহনযোগ্য নয়।
আর যদি সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ একাকার করা হয় তবে ৪ রাকাত, ৬ রাকাত, ১০ রাকাত তারাবীও পড়তে হবে। সালাফীরা কি সেটা পড়ে? অবশ্যই না।
সূতরাং নিজেদের নফসের চাহিদা পুরন করতে রোজার মাসে ৮ রাকাত তারাবী পড়ার লম্ফঝম্ফ নেহায়েতই হাস্যকর। আল্লাহ পাক তাদের সহীহ বুঝ দান করুন।
Comments
Post a Comment