ইসলামী শরীয়তের নির্ভরযোগ্য কিতাবপত্রেই ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বৈধতা দেয়া আছে ।

 

ইহুদী, নাছারা, কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের কাছে দ্বীন ইসলামের তথা ইসলামী শরীয়তের কোন গুরুত্ব নেই । ফলে তাদের নিকট ইসলামী শরীয়তের কিতাবেরও কোন গুরুত্ব নেই । তা কুরআন শরীফই হোক কিংবা হাদীছ শরীফ-এর কোন কিতাবই হোক অথবা অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের কোন কিতাবই হোক ।
মুসলমান ছূরতে মুনাফিক, ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিকদের ঘৃণ্য এজেন্ট ও অনুসরী উলামায়ে ছূ’গং সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য দলীল-প্রমাণ ব্যতীত মনগড়াভাবে প্রাচার করে যাচ্ছে যে, ইসলামী শরীয়তের নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ –এর বৈধতা দেয়া হয়নি ।
আসলে এসব উলামায়ে ছূ’গংদেরকেই আল্লাহ পাক সূরা আ’রাফ-এর মধ্যে চতুষ্পদ জন্তুর মতো বরং তার চেয়েও নির্বোধ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, তারা এমন যে, তাদের অন্তর থাকার পরেও তারা বুঝবে না, চোখ থাকার পরও তারা দেখবে না এবং কান থাকার পরও তারা শুনবে না এবং তারা জাহান্নামী হবে ।
এ প্রসঙ্গে ‘সূরা আরাফ’- এর ১৭৯ নম্ব্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- “আমি জিন-ইনসানের মধ্য হতে অনেককে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি । অর্থাৎ অনেকেই তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমলের কারণে জাহান্নামী হবে । তাদের অন্তর থাকার পরেও তারা বুঝবে না, চোখ থাকার পরও তারা দেখবে না এবং কান থাকার পরও তারা শুনবে না । তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো । বরং তার চেয়েও নির্বোধ । এবং তারা হচ্ছে চরম গাফিল অর্থাৎ তারা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে চরম জাহিল । উনার যিকির ও ছানা-ছিফত করার ব্যাপারে অমনোযোগী ।”
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ-এ সূরা মারইয়াম-এর মধ্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম- উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ –এর মুবারক দিনে উনাদের প্রতি আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ থেকে সালাম অর্থাৎ খাছ রহমত, বরকত, সাকীনা নাযিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন হযরত ঈদা আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
وسلم عليه يوم ولدت ويوم يموت ويوم حيا
অর্থঃ “উনার প্রতি সালাম (শান্তি) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করবেন এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন ।” (সূরা মারইয়াম – ১৫)
অনুরূপ হযরত ইয়াহিয়া আলাইহিস সালাম সম্পর্কে উনার নিজ বক্তব্য কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছ-
والسلم على يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا
অর্থঃ “আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো ।” (সূরা মারইয়াম - ৩৩)

এছাড়া, সূরা মায়িদা-এর মধ্যে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-উনার প্রতি আসমানী (বেহেশতী) খাদ্যের এক খাঞ্চা নাযিলের দিনটিকে উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল উম্মতের জন্য ঈদের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম দোয়া করেছিলেন- “আয় আমাদের রব মহান আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন । খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি, অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে । আমাদেরকে রিযিক দান করুন । নিশ্চই আপনিই উত্তম রিযিকদাতা । আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো । অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে এবং তা নাযিলের দিনটিকে ঈদ বা খুশির দিব হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি সারা ক্বায়িনাতের অপর কাউকে দিব না ।” (সূয়া মায়িদা – ১১৪,১১৫)
একইভাবে হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ ও প্রসিদ্ধ কিতাব ইবনে মাজাহ ও মিশকাত শরীফ-এ হযরত আদম আলাইহিস সালাম-উনাকে সৃষ্টি, উনার যমীনে আগমন এবং বিছাল শরীফ-এর দিন- জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই জুমুয়ার দিনকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা অপেক্ষা মহান দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে । সুবহানাল্লাহ ! যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে- হযরত উবায়িদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসালসূত্রে বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুয়ার দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায় ! এটি এমন একটি দিন, যে দিনটিকে আল্লাহ পাক ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন ।” (ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)
এ প্রসঙ্গে আরো হদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে- “হযরত আবূ লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত । এটি ঈদুল আদ্বহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত । এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে-
  1. এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন ।
  2. এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন ।
  3. এ দিনে উনাকে বিছাল শরীফ (জন্মদিন) দান করেছেন।
  4. এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ পাক উনার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন, যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং
  5. এ দিনই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশতা নেই , আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ভীত নয় ।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে, “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম- উনার দোয়া ক্ববূলের সময় হলো, তখন তিনি দোয়া করলেন, হে আমার রব ! আমি আপনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ওসীলায় প্রার্থনা করছি । অতএব আমার দোয়া ক্ববূল করুন । আল্লাহ তায়াল বলেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম ! আপনি কিভাবে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে চিনলেন, এখনো তো উনাকে যমীনে প্রেরণ করিনি । জাওয়াবে হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম বলেন, হে আমার রব ! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারকে তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ ফুকে দেন, তখান আমি আমার মাথা উত্তোলন করে আরশের খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই -
لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ বা মাবূদ নেই, সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক- উনার রসূল ।’
তখন আমি বুঝতে পারলাম, আপনার নাম মুবারকের সাথে যাঁর নাম মুবারক সংযুক্ত আছে, তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে মুহব্বতের হবেন । আল্লাহ পাক বলেন। হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম ! আপনি সত্য কথাই বলেছেন । কারণ তিনি সৃষ্টির মসহ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মুহব্বতের । হযরত আদম আলাইহিস সালাম বলেন, আয় আল্লাহ পাক ! উনার ওসীলায় আমার প্রার্থনা ক্ববূল করুন । আল্লাহ পাক বললেন, আমি আপনার দোয়া ক্ববূল করলাম । যদি আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন, তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করাতাম না । সুবহানাল্লাহ !
এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ ।
  • আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা ,
  • আছ ছহীহাহ ১ম খন্ড ৮৮ পৃষ্ঠা,
  • মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খন্ড ১০৬৯ পৃষ্ঠা,
  • আত তাওয়াসসুল ১১৫ পৃষ্ঠা,
  • তাফসীরুল দুররিল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১ম খন্ড ৫৮ পৃষ্ঠা,
  • কানযুল উম্মাল ১১ খন্ড ৪৫৫ পৃষ্ঠা ।
ফিকিরের বিষয় যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম- উনাদের বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ –এর দিন যদি ঈদ ও রহমত, বরকত, সকীনা নাযিলের দিন হয় এমনকি সামান্য এক খাদ্যের খাঞ্চা নাযিলের দিন যদি, ঈদ তথা খুশির দিন হয়, তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুন নাবিইয়ীন, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ- এর দিন ঈদ বা খুশির দিন হবে না কেন ? হযরত আদম আলাইহিস সালাম- উনার যমীনে আগমন ও বিদায়ের কারণে জুমুয়ার দিন যদি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়ে মহান বা শ্রেষ্ঠ হয় তাহলে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –উনাকে সৃষ্টি করা না হলে হযরত আদম আলাইহিস সালামসহ নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সৃষ্টি করা হতো না । শুধু তাই নয়, আসমান-যমীন, লওহো, কলম, আরশ-কুরসী, জিন-ইনসান, ফেরেশতা, জান্নাত-জাহান্নাম এক কথায় কায়িনাতের কোন কিছুই সৃষ্টি করা হতো না । তাহলে উনার যমীনে আগমন তথা বিলাদত শরীফ ও বিছাল শরীফ-এর দিন কত মহান, কত খুশির হবে তা বলার অপেক্ষাই রাখে না ।
ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর এ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ইসলামী শরীয়তের অসংখ্য কিতাবাদির মধ্য হতে কেবলমাত্র মূল কিতাব কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে প্রদান করা হলো । যাতে একমাত্র কাফির ব্যতীত কোন মুসলমানদের পক্ষে ‘ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ –এর বৈধতার ব্যাপারে কোন প্রকার চু-চেরা না থাকে ।

Comments

নতুন পোস্ট সমূহ

বিদআতের পরিচয়, বিদআত কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফের ৫৭-৫৮ নম্বর আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা

তাবলীগের অর্থ ও তাবলীগের প্রকার।

আরবীতে ‘কুল্লু/কুল্লুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক।কিন্তু সবসময় এ শব্দটি দ্বারা ‘প্রত্যেক/সকল’ অর্থ বুঝায় না।

তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ?

কিশোরী আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বিয়ে নিয়ে বিদ্বেষীদের মিথ্যাচার!!

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদুন্নবী

যারা বলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের দিন খুশী প্রকাশ করা যাবে না, তাদের বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

~~~~~~~~~~~ শরীয়তে ঈদ কয়টি ? ~~~~~~~~~~~

ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি প্যাগানদের থেকে এসেছে? ইহুদী, খ্রিস্টানদের কালচার? ইসলামী শরীয়ত জন্মদিন পালন সম্পর্কে কি বলে ?