ইসলাম প্রচারক কে হবেন? প্রকৃত আলিম কে?






মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-উনার মত নয়। অর্থাৎ তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত। পক্ষান্তরে মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন।


আর যাঁরা খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট প্রচারক, উনাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ولنكن منكم امة يدتمون الى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر واولئك هم المفلحون.
অর্থ : “তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা দ্বীন ইসলাম উনার) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।” (পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ১০৪)

অর্থাৎ তাকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত পরিমাণ ইলম, আমল এবং ইখলাছ হাছিল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
فلولا نفر من كل فرقة منهم طائفة ليتفقهوا فى الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم لعله يحذرون.
অর্থ : “কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। আশা করা যায়, তারা বাঁচতে পারবে।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ১২২)
দলীলঃ- (তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল বয়ান, ফাতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে সাবী, যাদুল মাসীর, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)

আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
تعلموا العلم وعلموه الناس.
অর্থ : “তোমরা দ্বীনী ইলম শিক্ষা কর এবং মানুষকে তা শিক্ষা দাও।” (দারেমী, দারে কুতনী, মিশকাত)


মূলতঃ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনাদের অবশ্যই ওলামায়ে হাক্কানী-রাব্বানী হতে হবে। আর হক্কানী, রব্বানী আলেম উনাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থ : “নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলিমরাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ২৮)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর হযরত ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলিম।”


আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,
من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الطمع.
অর্থ : “(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলিম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলিমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা)।” (দারিমী, মিশকাত) 
অর্থাৎ যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হাক্কানী-রাব্বানী আলিম।

কাজেই যিনি ইলম, আমল ও ইখলাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হাক্কানী আলিম, আর তিনিই হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ। যাঁদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
العلماء ورثة الانبياء.
অর্থ : “আলিমগণ হলেন- নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ, মিশকাত)


অর্থাৎ হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনারা নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে উনাদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য। আর এ আম তা’লীম ফরযে কিফায়ার অন্তর্ভূক্ত। যা অতীতে ও বর্তমানে উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ তাছাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদরাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদিভাবে দাওয়াত ও তা’লীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-উনার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আমের (ফরযে কিফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-উনার (ফরযে আইনের) খিদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

Comments

নতুন পোস্ট সমূহ

বিদআতের পরিচয়, বিদআত কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফের ৫৭-৫৮ নম্বর আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা

তাবলীগের অর্থ ও তাবলীগের প্রকার।

আরবীতে ‘কুল্লু/কুল্লুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক।কিন্তু সবসময় এ শব্দটি দ্বারা ‘প্রত্যেক/সকল’ অর্থ বুঝায় না।

তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ?

কিশোরী আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বিয়ে নিয়ে বিদ্বেষীদের মিথ্যাচার!!

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদুন্নবী

যারা বলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের দিন খুশী প্রকাশ করা যাবে না, তাদের বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

~~~~~~~~~~~ শরীয়তে ঈদ কয়টি ? ~~~~~~~~~~~

ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি প্যাগানদের থেকে এসেছে? ইহুদী, খ্রিস্টানদের কালচার? ইসলামী শরীয়ত জন্মদিন পালন সম্পর্কে কি বলে ?