মুফতি বায মিলাদুন্নবী উদযাপন বর্জনীয় বিদআত ও নাজায়েজ প্রমাণ করতে গিয়ে যে চারখানা হাদিস শরীফ উল্লেখ করেছে নিম্নে তার ব্যাখ্যাসহ তার দাবি খণ্ডন করা হল-




মুফতি বায মিলাদুন্নবী উদযাপন বর্জনীয় বিদআত ও নাজায়েজ প্রমাণ করতে গিয়ে যে চারখানা হাদিস শরীফ উল্লেখ করেছে নিম্নে তার ব্যাখ্যাসহ তার দাবি খণ্ডন করা হল-
১.তার উল্লেখিত প্রথম ও দ্বিতীয় হাদিসদ্বয়ের মর্মার্থ প্রায় একই ধরণের। হাদিস শরীফখানা হল এই-
عن عائشة رضى الله عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احدث فى امرنا هذا ما ليس منه فهو رد০ (متفق عليه)
অর্থাৎ ‘হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যে, যে ব্যক্তি আমাদের এই ধর্মে এমন কোন নতুন কিছু প্রচলন করল যা ধর্মের মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)’
উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত ما ليس منه (যা ধর্মের মধ্যে নেই) এর ভাবার্থ হলো যা ধর্মের বিপরীত ও ধর্মের পরিবর্তনকারী। যেমন আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘আশআতুল লোময়াত’ কিতাবের এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেন -
ومراد جيزى است كه مخالف ومغير ان باشد
অর্থ হাদিস শরীফ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে, যা ধর্মের বিপরীত ও ধর্ম পরিবর্তনকারী।
শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর উপরোক্ত ব্যাখ্যা হাদিসসম্মত বটে।
ঈদে মিলাদুন্নবি বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। কারণ প্রচলিত মিলাদ শরীফের মাহফিলের আয়োজন শরীয়তসম্মত পন্থায় করা হয়ে থাকে। যেমন -
*মিলাদ মাহফিলের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়।
*দরূদ শরীফ পাঠ করা হয়।
*দ্বীনের জরুরি মাসয়ালা মাসায়েল আলোচনা করা হয়।
*তারপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেলাদত শরীফ বা পবিত্র জন্ম সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহ বয়ান করা হয়।
*পাশাপাশি দাঁড়ানো অবস্থায় আল্লাহর হাবিবকে সালাত ও সালাম দেয়া হয়, যা কোরআনে পাকে নির্দেশিত আছে, তা ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রকারান্তরে মিলাদুন্নবী উদযাপন করায় ধর্মের কোন পরিবর্তন বা কোন সুন্নাতের পরিবর্তন হচ্ছে না, বরং ধর্মের সহায়কই হচ্ছে।
মুফতি বায উল্লেখিত হাদিস শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করে, মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠানকে নাজায়েয ও বর্জনীয় বিদআত বলেছে এটা তার নিজস্ব মতবাদ বৈ কিছুই নয়। ইসলাম কারও ব্যক্তি মতবাদ সমর্থন করে না।

২. মুফতি বায দলিল স্বরূপ উল্লেখিত তৃতীয় হাদীস-
عن العرباض بن سارية فعليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ
واياكم ومحدثات الامور فان كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة رواه احمد وابو داود والترمذى وابن ماجه)

অর্থাৎ ‘হযরত ইরবাজ বিন সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়িয়ে ধর, প্রমাণ হিসেবে উহার (আমার ও খোলাফাদের সুন্নাতের) উপর নির্ভর করবে এবং উহাকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকবে। অতএব তোমরা বেঁচে থাকবে ধর্মে নতুন আবিস্কৃত বিষয় থেকে। কেননা প্রত্যেক নতুন আবি®কৃত বিষয় হচ্ছে বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজী)’

৩. চতুর্থ হাদীস-
عن جابر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اما بعد فان خير الحديث كتاب الله وخير الهدى هدى محمد وشر الامور محدثتها وكل بدعة ضلالة০ (متفق عليه)

অর্থ ‘হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তারপর নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হচ্ছে আল্লাহর বাণী এবং সর্বোত্তম হেদায়ত হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার হেদায়ত। সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে মুহদাসাত বা ধর্মে নতুন আবিষ্কার এবং প্রত্যেক নতুন আবিষ্কার বা বিদআতই গোমরাহী।’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত শরীফ ৩০ পৃষ্ঠা)

উল্লেখিত দু’খানা হাদিসে
محدثات الامور ও شر الامور محدثاتها
দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রবর্তিত বিষয়সমূহ। এর দ্বারা এ সকল বাতিল আক্বীদাসমূহ অথবা ঐ সমস্ত সুন্নাত ধ্বংসকারী মন্দ আমলসমূহকে বুঝানো হয়েছে যা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পরে ধর্মের মধ্যে আবিষ্কার করা হয়েছে।

মিশকাত শরীফের কিতাবুল ইলিম অধ্যায়ে হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়ালাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غير ان ينقص من اجورهم شيى০ الحديث

অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ইসলামে কোন উত্তম তরীকা বা নিয়ম পদ্ধতি বের করবে, তার আমলনামায় উহার সওয়াব লিপিবদ্ধ হবে, তারপর তার অনুসরণে যারা তা আমল করবে, তারা যে পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হবে, সে সকল সওয়াব তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে। অথচ অনুসরণকারীদেরও সওয়াবের কোন অংশ কম করা হবে না।’
সুতরাং স্পষ্ঠভাবে প্রতীয়মান হল যে, ইসলামে কোন ভাল কাজের প্রচলন করা সওয়াবের কাজ, যে কাজ কোরআন সুন্নাহসম্মত।
মুফতি বাজ কি এই হাদিস দেখে নাই ?

এখন মুফতি বাজ যে -
সহি হাদিস দ্বারা প্রমানিত হারাম ছবি তোলে ,
টিভিতে অনুষ্ঠাণ করে ,
কাফিরদের পক্ষে বলে ,
ওহাবী সরকারের সকল অপকর্ম সমর্থুন করে,
তার ফতোয়া দিক দেখি ?

মুলত হারামে নিমজ্জিত পাপীরাই যে ঈদে মিলাদুন্নবির বিরোধীতা করে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমান এই কানা দাজ্জাল মুফতে বাজ ।

Comments

নতুন পোস্ট সমূহ

বিদআতের পরিচয়, বিদআত কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফের ৫৭-৫৮ নম্বর আয়াত শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা

তাবলীগের অর্থ ও তাবলীগের প্রকার।

আরবীতে ‘কুল্লু/কুল্লুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক।কিন্তু সবসময় এ শব্দটি দ্বারা ‘প্রত্যেক/সকল’ অর্থ বুঝায় না।

তাবলীগ করা কি সবার জন্য ফরজ?

কিশোরী আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বিয়ে নিয়ে বিদ্বেষীদের মিথ্যাচার!!

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদুন্নবী

যারা বলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফের দিন খুশী প্রকাশ করা যাবে না, তাদের বক্তব্যের দাঁতভাঙ্গা জবাব

~~~~~~~~~~~ শরীয়তে ঈদ কয়টি ? ~~~~~~~~~~~

ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি প্যাগানদের থেকে এসেছে? ইহুদী, খ্রিস্টানদের কালচার? ইসলামী শরীয়ত জন্মদিন পালন সম্পর্কে কি বলে ?